
📍 নিজস্ব প্রতিবেদক | গোপালগঞ্জ | ১ আগস্ট ২০২৫
গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ১২ শিশুর জামিন আবেদন গত চার দিনে আদালত কর্তৃক নামঞ্জুর করা হয়েছে। শিশু আইনের ২০১৩ সালের সংশোধিত ধারা অনুযায়ী তাদের বিচার শিশু আদালতে হলেও, আদালত জামিনের আবেদনগুলো পর্যাপ্ত ভিত্তিহীন মনে করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
এই ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠন, শিশু কল্যাণ সংস্থা এবং আইনজীবী মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—শিশুরা কীভাবে একটি সহিংস রাজনৈতিক বা সামাজিক সংঘাতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে এবং যদি তারা তাতে যুক্ত হয়েও থাকে, তবে সংশোধনের সুযোগ না দিয়ে জামিন না দেওয়ার পেছনে কী ধরনের যৌক্তিকতা কাজ করছে।
📌 ঘটনা কী?
গোপালগঞ্জে স্থানীয় একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে গত সপ্তাহে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে যানবাহন ভাঙচুর, সরকারি সম্পত্তি ক্ষতি এবং সংঘর্ষ অন্যতম। পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় বিভিন্ন বয়সী প্রায় ৪০ জনকে আটক করা হয়, যাদের মধ্যে ১২ জনের বয়স ১২ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে।
🧑⚖️ আদালতের সিদ্ধান্ত
জেলা শিশু আদালতের বিচারক জানান,
“তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের প্রাথমিক প্রমাণ রয়েছে। আইন অনুযায়ী তাদের মামলাগুলো শিশু আদালতেই চলবে। তবে প্রমাণাদি যাচাই না হওয়া পর্যন্ত জামিন দেওয়া নিরাপদ নয়।”
পুলিশ প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছে, বেশ কয়েকজন কিশোর ইট-পাটকেল ছোঁড়া ও রাস্তা অবরোধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়।
🗣️ প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের এক মুখপাত্র জানান,
“শিশুরা কখনোই সহিংসতার কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে না। তারা হয় ব্যবহার হয়, নয়তো পরিস্থিতির শিকার হয়। জামিন না দেওয়া তাদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।”
স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী রুহুল আমিন বলেন,
“শিশুদের বিচার হওয়া উচিত পুনর্বাসনকেন্দ্রিক ন্যায্য প্রক্রিয়ায়, শাস্তিমূলক নয়। আদালতের এমন সিদ্ধান্ত আমাদের সমাজে শিশুর নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলে।”
🔎 আইনগত দৃষ্টিকোণ
শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী, জামিন শিশুদের জন্য ‘প্রাথমিক অধিকার’ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। তবে বিচারক বিশেষ পরিস্থিতিতে সেই অধিকার সীমিত করতে পারেন যদি প্রমাণিত হয় যে শিশুর জামিনে মুক্তি জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে বা তদন্ত প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
📈 সার্বিক বিশ্লেষণ
এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় এখনও শিশু ও কিশোরদের অপরাধে যুক্ত হওয়ার ধারণা এবং তার প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে। এই ১২ শিশুর জামিন না পাওয়ার ঘটনা দেশব্যাপী শিশু-সুরক্ষা ও ন্যায়বিচার বিষয়ে নতুন করে চিন্তা করার দরকার তৈরি করেছে।